সিলেট প্রতিনিধি : খাদিজা বেগম নার্গিসের ওপর বর্বরোচিত হামলার এক বছর পূর্ণ হয়েছে আজ মঙ্গলবার। ২০১৬ সালের এই দিনে এমসি কলেজে হামলার শিকার হয়েছিলেন তিনি। ওই হামলার এক বছরেও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি খাদিজা। মঙ্গলবার সকালে সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানার হাউসা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় খাদিজা ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। এখনো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটেন খাদিজা। বাঁ হাতের আঙুলগুলো সোজা করতে পারেন না। বাঁ হাত দিয়ে কোনো কাজও করতে পারেন না। মাথায় ব্যথা লেগেই থাকে। প্রায়ই স্মৃতিবিভ্রাট ঘটে। পুরনো কথা মনে করতে পারেন না। তবু তার দু চোখ ভরা স্বপ্ন। আবার কলেজে ভর্তি হতে চান। ব্যাংকার হতে চান। নারীদের জন্য কাজ করতে চান।
গত বছরের ৩ অক্টোবর সিলেট এমসি কলেজে ক্যাম্পাসে কুপিয়ে আহত করা হয় সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্রী খাদিজাকে। দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন তিনি। তাকে কোপানোর ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। আদালতের রায়ে শাস্তি ও হয় হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের। তবে খাদিজা এখনও ফিরে পাননি স্বাভাবিক জীবন।
নিজের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খাদিজা বলেন, মাথা সবসময় ব্যথা করে। এক এক সময় প্রচন্ড ব্যথা হয়। বাঁ পা ও হাতে শক্তি পাই না। ফলে স্বাভাবিক হাঁটাচলাও করতে পারি না। ব্যথা সারানোর জন্য একটি ট্যাবলেট খেতে হয় সব সময়। তবে আগের থেকে এখন অনেক সুস্থ। আশা করছি ধীরে ধীরে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠব।
খাদিজার ওপর হামলার ঘটনায় মামলা করেছিলেন চাচা আব্দুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খাদিজার বাঁ হাতে একটা অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। এজন্য ৫ লাখ টাকার মতো লাগবে। টাকা জোগাড় করতে না পারায় এখনও অস্ত্রোপচার করাতে পারছি না। আগামী মাসে অস্ত্রোপচার করানো হবে।
গত বছরের ৩ অক্টোবর সিলেটের এমসি কলেজ কেন্দ্রে ডিগ্রি ফাইনাল পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন খাদিজা বেগম নার্গিস। তিনি সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ডিগ্রি (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। পরীক্ষা শেষে বেরোনোর সময় কলেজ ক্যাম্পাসেই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক (বরখাস্তকৃত) বদরুল আলমের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হন খাদিজা। হামলায় তার মাথার খুলি ভেদে করে মস্তিষ্কও জখম হয়। খাদিজাকে কোপানোর একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। হামলার বিচার দাবিতে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন সংগঠন।
হামলার পর খাদিজাকে উদ্ধার করে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেযিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে ওই রাতেই নিয়ে যায় হয় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে। সেখানে গত বছরের ৪ অক্টোবর বিকালে অস্ত্রোপচার করে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় তাকে। পরে ১৩ অক্টোবর তার লাইফ সাপোর্ট খোলার পর ‘মাসল চেইন’ কেটে যাওয়া তার ডান হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়। তিন দফা অস্ত্রোপচারের পর মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন খাদিজা। তবে শরীরের বাঁ পাশ স্বাভাবিক সাড়া না দেয়ায় তাকে সাভারের সিআরপিতেও তিন মাস চিকিৎসা নিতে হয়। সিআরপিতে তিন মাসের চিকিৎসা শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ফেরেন এই কলেজছাত্রী।